শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
রূপালী স্বাস্থ্য।।
অনেক মা-বাবা তাদের শিশুকে নিয়ে দেড় বছর এমনকি ৪-৫ বছর বয়সে অর্থোপেডিক সার্জনের পরামর্শ নিতে আসেন। আবার অনেকে সারাজীবনে একবারও এর চিকিৎসার প্রয়োজনটা বোধ বা অনুভব না করে বিকলাঙ্গতা নিয়েই পঙ্গুত্ববরণ করে থাকেন।
এ রোগটি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও সময়মতো চিকিৎসার অভাবে এর অনেক খারাপ প্রতিক্রিয়া পরিণত বয়সে বহন করতে হয়। শিশুদের এই জন্মগত রোগটি প্রতি হাজারে ১জন বা ২জনের হতে পারে এবং ছেলেদের সংখ্যা ৭৫% ভাগ এবং মেয়েদের সংখ্যা ২৫ ভাগ। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এ রোগটা কেনই বা হয় এবং এর চিকিৎসাই বা কী?
এ রোগ শিশুর একটি বা দু’টি পা নিচু হয়ে থাকে এবং ভেতরের দিকে বেঁকে এবং ঘুরে থাকে। ইংরেজিতে এটাকে ক্লাব ফুট (মুগুর পা) বলে। এ রোগটাকে আমরা তিনভাগে ভাগ করে থাকি। প্রথম ধরনের ক্ষেত্রে পা বেশ নরম থাকে এবং অতি সহজেই হাত দ্বারা বাঁকা পা সোজা করা যায় এবং পর্যায়ক্রমিক প্লাস্টার করার মাধ্যমে এর ৯৫ থেকে ১০০ ভাগ চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।
দ্বিতীয় ধরনের ক্ষেত্রে বেশি খারাপ এবং এদের শতকরা ৭৫% রোগীরই অপারেশন দরকার এবং মাত্র ২৫% রোগীর চিকিৎসা প্লাস্টার দ্বারা সম্ভব।
তৃতীয় ধরনের ক্ষেত্রে পা বেশি বেঁকে যায় এবং তন্তুগুলো ছোট হয়ে যায় বলে অপারেশনের ফলাফলও বেশ আশাপ্রদ নয়। তবে আশার আলো যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের ক্ষেত্রে ইলিজারভ পদ্ধতির মাধ্যমে ৪-৫ মাস বয়সী থেকে ১২-১৩ বছরের বাচ্চাদের সম্পূর্ণ বিনা অপারেশনে অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে যাওয়া পা-সম্পূর্ণ সোজা করা সম্ভব।
রোগের কারণ-
মাতৃগর্ভে বাচ্চার অবস্থান মাংসপেশী, স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা, এসব কারণকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। এ রোগের চিকিৎসার ফলাফল নির্ভর করে রোগের ধরনের ওপর এবং কখন থেকে চিকিৎসা শুরু করা হলো তার ওপর। বেশিদিন বিনা চিকিৎসায় থাকলে পায়ের ও গোড়ালির গঠনগত বিভিন্ন অংশগুলো ক্রমান্বয়ে আরও খারাপ হয়ে থাকে এবং তখন চিকিৎসাও কঠিন হয়ে পড়ে।
এ রোগটির চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশন ছাড়াই করা সম্ভব। ইলিজারভ পদ্ধতি হলো এর আধুনিকতম সংযোজন। এমন কি এর সাহায্যে একটি মানুষের ছোট পা বড় করা বড় পা ছোট করাসহ একজন বেঁটে মানুষকে কাঙ্খিত লম্বা করাও সম্ভব।
দেহের একটি জন্মগত অংশের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে যে মানুষটি নীরবে, নিভৃতে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে চলেছেন, বুকের গভীর থেকে দীর্ঘ একটা শ্বাস গোপনে ছেড়ে দিয়ে যিনি ভাবছেন, কোন এক গোপন পাপের অভিশাপ তার জীবনকে এভাবে তছনছ করে দিল বুঝি! এমন মানুষের জন্য নিছক শান্ত্বনা নয়, বাস্তবে সোনার হরিণের সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন একাডেমিক প্রফেসর জি, এ, ইলিজারভ।
বিগত দেড় দশক ধরে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবন মানুষের জন্য বাংলাদেশে আমরা চালিয়ে যাচ্ছি এই পদ্ধতি। মনে রাখবেন আপনার শিশুর ভবিষ্যত ভেবে দেখার দায়িত্ব আপনারই; আপনি নিশ্বয়ই চান না আপনার ফুটফুটে শিশুটি পঙ্গুত্ব জীবন-যাপন করুক। আমরাও চাই সবার জন্য পঙ্গুত্বহীন সুন্দর জীবন। তাই বাঁকা পাঁয়ের শিশু জন্মের সাথে সাথে অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখিয়ে ৫/৬ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে পুরোটা ভালো হওয়া সম্ভব।
ডা: কে.এম. জাহিদুল ইসলাম
এমবিবিএস(ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অর্থোপেডিক সার্জারী) অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ঢাকা।